অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : চীনের সামরিক বাহিনীর নতুন পদে আসা জেনারেলরা হয়তো প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের প্রতি রাজনৈতিক আনুগত্যের কারণেই নিয়োগ পেয়েছেন। কিন্তু একটা বিষয় স্পষ্ট অনুমান করা যাচ্ছে যে তারাই শির তাইওয়ান পরিকল্পনাকে দ্রুত বাস্তবায়নে সহায়তা করবে।
এশিয়া ও পশ্চিমের আটটি সামরিক অ্যাটাশে রয়টার্সকে বলেছে, যদিও পলিটব্যুরোর সাত সদস্যের স্থায়ী কমিটি তাইওয়ানের যেকোনো পদক্ষেপের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে, তবে কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশন যুদ্ধ পরিকল্পনা তৈরি করবে এবং কার্যকর করবে।
রবিবার কমিউনিস্ট পার্টির পঞ্চবার্ষিক কংগ্রেসের পরে শীর্ষ কমান্ড বডিতে তিনজন নতুন জেনারেল নিয়োগ করা হয়েছিল। সেই ইভেন্টে শি বলেছিলেন, স্ব-শাসিত দ্বীপের নিয়ন্ত্রণ নিতে চীন কখনো শক্তির ব্যবহার ত্যাগ করার প্রতিশ্রুতি দেবে না।
চার নিরাপত্তা বিশ্লেষক এবং চার সামরিক অ্যাটাশের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, ইউক্রেনে আগ্রাসন এবং রাশিয়ার ভরাডুবি দশা দেখে চীন অন্তত এটা বুঝতে পেরেছে তাইওয়ান এবং এর আন্তর্জাতিক সমর্থকদের পাশ কাটিয়ে চীনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কতটা গতি আবশ্যক।
সিঙ্গাপুর-ভিত্তিক কৌশলগত উপদেষ্টা আলেকজান্ডার নিল বলেছেন, ‘শি জিনপিং যদি তাইওয়ান আক্রমণে যান, তাহলে সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশন থেকে কোনো ভিন্নমত নিতে পারবেন না তিনি। যেকোনো ধরনের সুবিধা সুরক্ষিত করার জন্য তাদের দ্রুত, বিদ্যুতের দ্রুত গতিতে চলতে হবে। এখানে বিভ্রান্তির কোন অবকাশ নেই। তাইওয়ানের বিষয়ে চীনের চিন্তাভাবনা সবসময়ই। এমনকি যুদ্ধক্ষেত্রে ধীরগতির সামরিক রসদ সরবরাহ যে কতটা প্রভাব ফেলে এবং এই পরিস্থিতি এড়ানো যে কতটা জরুরি সেটা চীন এতদিনে ইউক্রেন যুদ্ধের অচলাবস্থা দেখে নিশ্চত হয়েছে।’
প্রথম দুই মেয়াদে শি দুর্নীতির অভিযোগে হাজার হাজার কর্মকর্তাকে শুদ্ধ করেছেন এবং সেনাবাহিনীর ওপর দলের নিয়ন্ত্রণ শক্ত করার চেষ্টা করেছেন।
সামরিক কমান্ডের ওপর শি তার দখল আরও মজবুত করেছেন। সাত সদস্যের কমিশনে নতুন তিন জেনারেল নিয়োগ করা হয়েছে এবং তার নিকটতম সামরিক আস্থাভাজন জেনারেল ঝাং ইউক্সিয়াকের অবসরের বয়স হওয়ার পরেও মেয়াদ বাড়িয়েছেন।
ঝাংকের কথা উল্লেখ করে সিনাগপুরের এস. রাজারত্নম স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সামরিক পণ্ডিত জেমস চার বলেছেন, ‘নজির ভাঙার এই নজিরটি তার সুবিধার জন্য একযোগে দুটি লক্ষ্য অর্জনে ব্যবহার করা হচ্ছে। এগুলো হলো পিএলএ-এর শীর্ষ সৈনিককে অপারেশনাল কমান্ডে পারদর্শী এবং রাজনৈতিকভাবে নির্ভরযোগ্য কেউ নিশ্চিত করা।’
৭২ বছর বয়সী ঝাং চীনের সামরিক বাহিনীতে বেশ প্রভাবশালী। ২০২১ সালে চীনের সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়ন নিয়ে পেন্টাগনের প্রতিবেদনে তাকে পিপলস লিবারেশন আর্মির ‘নৃপতি’ বলা হয়েছে। ১৯৪৯ সালে চীনা গৃহযুদ্ধের অন্তিম পর্যায়ে ঝাও-র বাবা শি’র বাবার সঙ্গে একসঙ্গে লড়েছিলেন।
ঝাং-এর অন্যতম শিষ্য জেনারেল লি শাংফুকেও এবার পদোন্নতি দিয়ে কমিশনে নিয়ে আসা হয়েছে। তিনি ইলেকট্রনিক, সাইবার ও মহাকাশ যুদ্ধকৌশল দেখভালের দায়িত্বে থাকা পিপলস লিবারেশন আর্মির ডিজিটাইজড স্ট্র্যাটেজিক সাপোর্ট বাহিনীতে ছিলেন।
জেনারেল হে ওয়েইডংকে ঝাংয়ের নিচে কমিশনের সেকেন্ড ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাইওয়ান বিষয়ক কার্যক্রম যার অধীনে, সেই চীনের ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ডে দায়িত্ব পালনের পর তার এই পদোন্নতি হল।
আগস্টে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের নেতা ন্যান্সি পেলোসির তাইপে সফরের প্রতিবাদে তাইওয়ানের আশেপাশে অভূতপূর্ব যে সামরিক মহড়া এবং ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছিল বেইজিং সেটার তত্ত্বাবধান করেছিলেন তিনি।
শি যখন ফুজিয়ানে ছিলেন, হে তখন সেখানে থার্টিফার্স্ট আর্মি গ্রুপেরও দায়িত্ব পালন করেছেন। সে সময় থেকেই দুইজনের মধ্যে ভালো যোগাযোগ। থার্টিফার্স্ট গ্রুপ আর্মিতে থাকা অ্যাডমিরাল মিয়াও হুয়া-ও এবারের কমিশনে আছেন।
জেনারেল লিউ ঝেনলিকে পদোন্নতি দিয়ে নতুন লাইন-আপে স্থান দেওয়া হয়েছে। তিনি বেইজিংয়ের আশেপাশে বাহিনীর কমান্ডে ছিলেন এবং চীনের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বাহিনী পিপলস আর্মড পুলিশে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার।
ঝাংয়ের সঙ্গে লিউয়েরও আশির দশকে ভিয়েতনাম যুদ্ধের অভিজ্ঞতা রয়েছে।
Leave a Reply